কামারখন্দে গৃহবধুকে ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেওয়ার কথা বলে তালাকনামায় সাক্ষর ও মারপিটের অভিযোগ।
আশিকুল ইসলাম প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে স্বামী বিদেশ থাকায় নিজ নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেওয়ার কথা বলে আফসানা নামে এক গৃহবধূর কাছ থেকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে দেড় বছরের কন্যা শিশুকে কেড়ে রেখে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে এক পরিবারের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ৮ই অক্টোবর এঘটনা ঘটে। এঘটনায় এলাকায় তোলপার সৃস্টি হয়েছে।
ঘটনা স্থলে গিয়ে জানা যায় চার বছর আগে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত জহির হোসেনের মেয়ে আফসানার সঙ্গে সিরাজগঞ্জের শাহবাজপুর গ্রামের লতিফ প্রামাণিকের ছেলে উজ্জ্বল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয় এই দম্পত্তির। কিন্তু বিয়ের আগে থেকে স্বামী জুয়া খেলা ও মাদকের আসক্ত ছিলো। যার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। আফসানাকে বিয়ে করার আগে ফুপাতো বোনকে বিয়ে করেছিলো উজ্জ্বল। মাদকাসক্ত উজ্জল, তার মা, বোন ও ভাইয়ের নির্যাতনে উজ্জ্বলের প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। শুধু উজ্জ্বল নয়, তার আপন বড় ভাই ও বোনের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও রয়েছে। যার কারণে শাহবাজপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে উজ্জ্বলের পরিবারের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
ভুক্তভোগী গৃহবধু আফসানা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের ৫ মাস আগে বাবা মারা যাওয়ায় পাঁচ বোনকে নিয়ে আমার হতদরিদ্র মা অসহায় হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিয়ে জেনেও উজ্জ্বলের সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই উজ্জ্বল জুয়া ও মাদকে মগ্ন থেকে কখনো মধ্য রাতে আবার কখনও বা ভোর রাতে বাড়িতে ফিরতো। এসব ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে সে আমাকে মারধর করতো। বছর খানেক পর আমাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যার জন্মের তিন মাস পর মালয়েশিয়া চলে যায় উজ্জ্বল। পরে বিভিন্ন সময় অকারণে শাশুড়ি, ননদ ও ভাসুর রহিম আমাকে মারধর করতো।
গৃহবধু আফসানা আরও জানায়, অন্যদিকে প্রবাসী স্বামীর কাছে আমার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দিতো। তার জেরে উজ্জ্বলও ফোন করে নানাভাবে আমাকে মানসিক নির্যাতন চালাতো। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এ সংসার ত্যাগ করিনি। পরে জানতে পারি আমরা ননদের সন্তানাদি না হওয়ায় আমাকে তালাক দিয়ে আমার মেয়েকে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। সব শেষ রোববার দুপুরে আমার নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য শাশুড়ি, ননদ ও ভাসুর এসে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। আমি নিদ্বির্ধায় স্বাক্ষর করে দেই। পরে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়া করা বারিক নামের একজন কাজী ও শাহবাজপুর গ্রামের বখাটে কথিত হুজুর এনামুল এসে বলেন, তোমার স্বামী তোমাকে তালাক দিয়েছে। তুমিও তাকে তালাক দাও। এ কথা শোনার পর আমি চিৎকার দিয়ে অচেতন হয়ে যাই। পরে প্রতিবেশীরা এসে আমাকে মাথায় পানি দিলে কিছুটা সুস্থ বোধ করি। পরে দেখি আমার মেয়েকে আমার শাশুড়ি নিয়ে গেছে। পরে তার কাছে মেয়েকে চাইতে গেলে মেয়েকে দিবেন না বলে জানান। পরবর্তীতে এখানে আমার আপন কেউ না থাকায় সুষ্ঠু সমাধানের জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রাতেই মেয়েকে আমাকে দিয়ে দেওয়া হয়।
আফসানার শাশুড়ি রেনুকা বেগম ও ভাসুর আব্দুর রহিম বলেন, আফসানার কাছ থেকে আমরা জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর নিতে যায়নি। আফসানা নিজেই উজ্জ্বলকে তালাক দিয়েছে। আর আমরা কেউ আফসানাকে মারধর করিনি বরং আফসানাই আমাদের সবাইকে মারধর করে।
ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা তবে যতটুকু জানতে পেরেছি মেয়েটার সাথে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে।
এবিষয়ে কামারখন্দ থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল ইসলাম জানান এঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।