“পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে নিউজ করার জন্য হুমকি প্রদান”
ফরিদপুরের সালথায় অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্র করার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুর রশিদ আবদেন বাতিল করেন।এ বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে আমিও নিউজ করি।এ বিষয় করে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত করিম টেলিকম এর অপারেটর ইব্রাহিম হোসেন আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে।
উল্লেখ্য আমার বাসা এবং ঐ অভিযুক্ত করিম বাওয়ালী ও অপারেটর ইব্রাহিম হোসেন যথাক্রমে একই এলাকায় বসবাস করি। সে কারনেই পেশাগত কর্তব্যের অংশ হিসেবে ইব্রাহিম হোসেন এর নিকট এ বিষয়ে কথা বলি ফোনে,ইব্রাহিম অকপটে সত্যতা নিশ্চিত করে বক্তব্য দেন। এটার অডিও ক্লিপ রয়েছে।এই ক্লিপ টা যে কোন ভাবে ভাইরাল হলে গতকাল ইব্রাহিম হোসেন আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এবং নানান হয়রানি করবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
এছাড়া চাঁদা বা জরিমানা হিসেবে ৫০০০০ টাকা দিতে হবে বলে।
আরও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বলে আমিও ঐ কাজের সঙ্গে জড়িত।
এখন আমি নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে আছি।
এজন্যই সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট বিশেষ ভাবে অনুরোধ করে বলছি,যেন আমার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
করিমের সাথে সাক্ষাৎ করতে চেষ্টা করতে গিয়ে। তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়।তিনিও পরোক্ষভাবে হুমকি স্বরূপ ভাষা উল্লেখ করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে দিলদারা বেগম, মনিরুল ইসলামের ছেলে নূর মোস্তফা, খোকন মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান, কালা মিয়ার মেয়ে বুশরা বেগম, আব্দুল মানিকের ছেলে নূর বশার জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।
আবেদনের সময় দেওয়া তাদের জন্মসনদগুলো কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে করা। তাদের নামে ১০ সেপ্টেম্বর সালথার বল্লভদী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান শাহীন। জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস কুমার হোড়।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যের সহায়তায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, গত মঙ্গলবার এমন খবর জানাজানি হয়। পরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও সাংবাদিকরা এ নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদন বাতিল করেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আবেদন আসার পর দেখি জন্মসনদ অন্য জায়গার। কিন্তু তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে চান সালথার ফুলবাড়িয়া থেকে। এতে সন্দেহ হয়। তাই আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তবে তারা রোহিঙ্গা কি না, তা বলতে পারব না।’
ফুলবাড়িয়া গ্রামের শাওন কাজী, তপন কুমার সরকারসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, ফুলবাড়িয়া গ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনকারীদের বাবা হিসেবে দেওয়া খোরশেদ আলী, মনিরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, কালা মিয়া, আব্দুল মানিক নামে কোনো ব্যক্তি নেই।
ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীন বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে ওই পাঁচজনের নামে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, করিম নামে এক ব্যক্তি ব্যস্ততার সুযোগে শনাক্তকারী হিসেবে তার স্বাক্ষর নেন।’
আবেদনের শনাক্তকারী ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড় বলেন, ‘ওই দিন (১০ সেপ্টেম্বর) কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এই সময় স্থানীয় করিম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী করিম বাওয়ালী পাঁচটি আবেদনের স্বাক্ষর নিয়ে যান। বুঝতে পারিনি সে (করিম) আমার সাথে চিটারি করবে।’ তবে মোবাইল ফোন ও দোকান বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে করিম বাওয়ালীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান বালি বলেন, ‘পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সেটি বন্ধ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’