সরকার বনাম জনগণ যা বল্লেন অথই নূরুল আমিন
ভিক্টর বিশ্বাস চিতা
গত পঞ্চাশ বছর ধরে যত সরকার ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ওরা সবাই ছিল নিজ নিজ স্বার্থ হাসিল নিয়ে ব্যস্ত। যখন যারা ক্ষমতায় ছিলো। তাদের বিপক্ষের সাথে অসভ্য আচরণ করেছে সবসময় । তাই দেশের মানুষেরা দেশপ্রেমিক হয়নি।
যার ফলে কখনও ভারতের কথা নিয়ে একদল উল্লাস করে। কখনও আমেরিকার কথা নিয়ে আরেক দল উল্লাস করে। দেশের মানুষদের কে যদি দেশপ্রেমিক করে গড়ে তোলা হতো। তাহলে কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বুঝে সিদ্ধান্ত নিত জনগণ । এখন কিন্তু তা হচ্ছে না।
দেশের এক শ্রেণির জনগণ মনে করে যা হয় হোক।
গত পঞ্চাশ বছরের উল্টাপাল্টা রাজনীতির ফলে মানুষের ভিতরে দেশ নিয়ে। অদুর ভবিষ্যত নিয়ে আগামী প্রজন্মকে নিয়ে কেউ আর তেমন ভাবছে না।
দেশের মানুষ দেশপ্রেমিক না হওয়ার ফলে এক শ্রেণির মানুষেরা আজকে চরম অসভ্যতায় রূপ নিয়েছে। জন্ম সূত্রে যে তারা এই দেশের নাগরিক। এই দেশ নিয়ে যে তাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। এরকম কিছু তারা কেউ ভাবছে না।
গত পঞ্চাশ বছর ধরে যারা এই দেশ বিভিন্ন সময় পরিচালনা করেছে। তাদের সবার আচরণ ছিলো সমগ্র জাতিকে নির্যাতনের সমান। তাই এক শ্রেণির মানুষেরা ভিতরে ভিতরে জনরোষে রেগে মেখে যেন আগুন হয়ে রয়েছে ।
আরেক শ্রেণির লোকেরা হয়ে গেছে বদমেজাজি। ওরা কেউ চোর। কেউ ডাকাত,কেউ জল দস্যু,কেউ বন দস্যু। কেউ ভূমি দস্যু, কেউ কেউ শোষক। কেউ কেউ মহা সিন্ডিকেট। একজন মানুষের প্রতি আরেকজনের যেন কোনো মমতা নেই। মায়া নেই। পাক্কা যেন একটা যাযাবর জাতিতে পরিণত হয়েছে গোটা জাতি।
এক কথায় বলা যায়। দেশপ্রেম তথা মাতৃ প্রেম জন্ম ভূমি প্রেম যাদের ভিতরে নেই তাদের দ্বারায় সব মন্দ কাজ এই সমাজে করা সম্ভব।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পযর্ন্ত। সর্ব মানুষের কোনো সরকার ক্ষমতায় আসেনি। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। তাই কাগজে লেখা হয়। আওয়ামী সরকার। আবার অনেকেই বলে শেখ হাসিনার সরকার। যা খুবই দুঃখজনক।
সেদিন বিএনপি ছিল ক্ষমতায় তখন বলা হয়েছে বিএনপি সরকার। কেউ কেউ বলছে অমুক জোট সরকার।
এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। তার ক্ষমতার আমলে নাম ছিলো স্বৈরাচারী সরকার। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলো তার সরকারের আমলে নাম ছিলো হা না ভোটের সরকারসহ ইত্যাদি ইত্যাদি নামে আমাদের দেশের সরকার গুলো এলো আর গেলো।সব সরকার জন মত উপেক্ষা করে স্বজন প্রীতির মাধ্যমে দেশ চালানো হলো। তাই সিংহভাগ মানুষ দেশপ্রেমিক না হয়ে পাক্কা মানুষ রুপী পশুতে পরিণত হলো। যার ফলে আজকে সমাজে একতা আর ঐক্য নেই। গোটা জাতি আজ বিভাজন হলো। এক ভাই আরেক ভাইয়ের শত্রু হলো। এক প্রতিবেশি আরেক প্রতিবেশীর কাছে বন্ধু না হয়ে শত্রু হলো।
রাজনীতি অঙ্গনে একদল আরেক দলেরে কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতির বয়ান আর ভাষণ যেন অতিতের সকল বরবরতাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে।
রাজনীতি অঙ্গনের নেতা নেত্রীদের চরম অসভ্যতার ফলে গোটা সমাজ আজ অসভ্য হয়ে পরেছে। প্রতিদিন রাজনীতির কারণে খুন খারাপি মামলা মকদ্দমা বিচার শালিশি লেগেই আছে।
গত পঞ্চাশ বছরের অগোছালো রাজনীতির ফলে গোটা দেশটা আজ নরকে পরিণত হয়েছে। আজকে এই সমাজের মানুষ এতোটাই খারাপ হয়েছে। এবং রাজনীতি অঙ্গনে এতোই রেষারেষি চলে। একদলের লোক মারা গেলে অন্য দলের লোকেরা আনন্দ উল্লাস পযর্ন্ত করে। ছি ছি
গত পঞ্চাশ বছরেও আমরা না হতে পারলাম ঐক্য। না হতে পারলাম সভ্য। না হতে পারলাম শিক্ষিত। আর মানুষ হওয়ার জন্য তো আমরা কোনো রকম সুযোগ এবং সময় কোনোটাই পেলাম না।
সবাই ক্ষমতায় এসে তারা একটি কথাই বলছে। দেশের উন্নত করেছে। আর উন্নয়ন করেছে।
আজকে আপনাদের সেই উন্নয়নের কোনো কদর কেন কোনো জনগণ করছে না। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে রাস্তা পাকা করে। ব্রীজ বানিয়ে আপনারা বলছেন। উন্নয়ন করেছি। জনগণ বলছে। আমাদের উন্নয়ন না করে রাস্তার উন্নয়ন কেন? এই দেশের সরকার যদি জনগণের উন্নয়ন করে দেয়। তাহলে রাস্তার উন্নয়ন তো জনগণই করতো যখন যেখানে যা লাগতো। তা আর হলো না।
কমিশন বাণিজ্যটা এতটাই লোভনীয় যে রাস্তা আর ব্রীজের কাজ থাকা চাই চাইই।
বিশেষ করে ষোল কোটি মানুষের জন্য 22 — 23 সনের উন্নয়নের জন্য যত টাকার বাজেট পাশ করা হলো। সরকার এই টাকার যদি কোনো উন্নয়ন কাজ না করে মাথা পিছু এই টাকা বন্টন করে দিতো। তাহলে শ্রেণি ভেদে তিন লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা পযর্ন্ত নগদ দেয়া সম্ভব ছিলো প্রতিজনকে। অথচ এতো বাজেট থাকা স্বত্বেও। দেশের চিকিৎসা সেবা নাজেহাল। দেশের প্রশাসনসহ সকল সরকারি সেবায় চলে প্রকাশ্য ঘুষ।
এহেন অবস্থায় এক শ্রেণির মানুষের কাছে রাজনীতি যেন সোনার হরীণ। আরেক শ্রেনির মানুষ যেন শোষণের স্বীকার। রাজনীতি নামটাই যেন ঘৃণা করছে অনেকে।
কিছু দিন আগে যখন একজন প্রধানমন্ত্রীর ছোট ছেলেটা মারা গেল। তখনও এক শ্রেণির লোক শোক জানিয়েছে। আরেক শ্রেণির লোক অট্র হাসি হেসেছে। আজকে একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সব সম্পত্তি আমেরিকায় বাজেয়াপ্ত হওয়ার গুঞ্জন শুনেই এক শ্রেণির লোক আনন্দে আত্মহারা। বাহ্ বাহ্
তবে এই যে চরিত্র, এই যে একদলের প্রতি অন্য দলের ঘৃণা ভাব এটা যেমন একদিনে হয়নি। তেমনি জনগণের এখানে দোষ নেই। এই চরিত্র বড়রা বানিয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তারপরও ভালো থাকুক আমার দেশের মানুষ। সকলস্তরের মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এই রইল প্রত্যাশা।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিষ্ট ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞ।