ছাতকে সরকারী বাসা ভাড়ার টাকা পরিশোধে কয়েক বছর যাবত বিএনপি নেতার টালবাহানা
সুনামগঞ্জের ছাতকে সরকারী পল্লীপূর্ত ভবনের বাসার বকেয়া ভাড়ার এক লাখ ১৩ হাজার ৪শ’৪৩ টাকা পরিশোধ করছেন না সাংবাদিক নামধারী বিএনপি নেতা আব্দুল আলিম। এ যেন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতার দাপোট! তিনি উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিক নোটিশ দিলেও আমলেই নিচ্ছে না ওই বিএনপি নেতা।
কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই সরকারী বাসা ভাড়ার বকেয়া টাকাগুলো আদায় করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য অনেকের।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের সরকারী পল্লীপূর্ত ভবনের ৩নং বাসাটি সাংবাদিক পরিচয়দানকারী বিএনপি নেতা আব্দুল আলিমকে বরাদ্দ দেয়া হয়। তখন অগ্রিম ৯হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রতি মাসে মাত্র আড়াই হাজার টাকা করে বাসা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী ৪৮ মাসের ভাড়া দাড়ায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। পূর্বের অগ্রিম ৯হাজার টাকা বাদ দিলে শুধু বাসা ভাড়া এক লাখ ১১হাজার টাকা ও বকেয়া গ্যাসবিল ২ হাজার ৪৪৩ টাকার হিসেব একটি তাগিদপত্রে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওই তাগিদপত্রে রহস্যজনক কারণে উল্লেখ করা হয়নি পানি ও বিদ্যুৎবিল। ৪৮ মাসের মধ্যে মাত্র তিন মাসের বকেয়া গ্যাসবিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারী নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে তাকে সরকারী বাসাটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ৪৮ মাস এ বাসায় বসবাস করেন আব্দুল আলিম। পরবর্তীতে তিনি বাসাটি ছেড়ে দিলেও ভাড়া ও গ্যাস বিলের ১ লাখ ১৩ হাজার ৪শ’৪৩ টাকা বকেয়া থেকে যায়। এসব টাকা তিনি পরিশোধ করেননি।
২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ বাসা বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ বার তাকে তাদিগ নোটিশ দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে এখনও টাকা আদায় করা হয়নি। সর্ব শেষ ৩নং তাগিদপত্র দেয়া হয় ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। আর ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল বকেয়া বাসা ভাড়া পরিশোধের জন্য বার বার তাগিদ প্রদান সত্ত্বেও আব্দুল আলিম বকেয়া বাসা ভাড়া পরিশোধ করেন নি। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং তারিখের মধ্যে বকেয়া ভাসা ভাড়া পরিশোধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করা হয় তাগিদ পত্রে। কিন্তু কাগজের নোটিশে এসব উল্লেখ করা হলেও রহস্যজনক কারনে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়, বিএনপি নেতা আবদুল আলিম জনৈক আওয়ামীলীগ নেতার ছত্র-ছায়ায় থাকায় সরকারী পল্লীপূর্ত ভবনের বকেয়া টাকা পরিশোধিত হচ্ছে না।
উপজেলা বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও এলজিইডি প্রকৌশলী আফছর আহমেদ বলেন, সরকারী পল্লীপূর্ত ভবনের বাসা ভাড়া যখন দেয়া হয়েছিলো তখন আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। তিনি বলেন, বকেয়া টাকা আদায় করতে পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধুরী বলেন, সরকারী পল্লীপূর্ত ভবনের ভাড়া বকেয়া থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এবিষয়ে খোঁজ-খবন নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ বাসা বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, পাবলিককে সরকারী ভবন ভাড়া দেয়া যায় না, তবে বাসা খালী থাকলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ভালো মানুষ দেখে দেয়া যায়। তিনি আরও বলেন, বকেয়া বাসা ভাড়ার টাকা আদায়ে আগামী বাসা বরাদ্দ কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।