অলংকার মোড়ে ফুটপাতের দোকানে ফাঁড়ি ইনচার্জের প্রভাব !
অলংকার মোড়ে ফুটপাতের এক হকারকে জোরপূর্বক তুলে উঠিয়ে দিয়ে অন্য একজনকে জায়গা ঠিক করে বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ফাঁড়ির এক ইনচার্জের বিরুদ্ধে।
এছাড়া, এই কাজে নাম বিক্রি করা হয়েছে একজন উপপুলিশ কমিশনার এর। যদিও বিষয়টি ডাহা মিথ্যে ভিত্তিহীন এবং এ বিষয়ে অধিকতর খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি’র পশ্চিম বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন।
অলংকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমিত বড়ুয়া গত শনিবার (৯ই সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত আনুমানিক ৩টার দিকে ২ থেকে ৩ জন লোককে কাজে লাগিয়ে অলংকার মোড়ের হোটেল ড্রীম নাইট সংলগ্ন ও বন্দর বিতান মার্কেটের সামনে ফল বিক্রয়ের ভ্রাম্যমান সরঞ্জাম সরিয়ে দিয়ে একটি নতুন চৌকি স্থাপনের মাধ্যমে দোকানটি দখলে নেন বলে জানান ৭ বছর ধরে সেই স্থানে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করে আসা হকার রুবেল।
পরের দিন দেখা করে কারণ জানতে চাইলে ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমিত বড়ুয়া হকার রুবেলকে জানাই, “ডিসি স্যারের আত্মীয় বিদেশ থেকে এসে বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। একটা দোকান ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনেক দিন আগে থেকে। তোমাদের হকারের নেতারা আমাকে একটা জায়গাও ঠিক করে দিতে পারে নি। স্যার যদি ক্ষিপ্ত হয় তাহলে কিন্তু সব হকারকে উচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হবে। ফুটপাতের জায়গাকে কেউ নিজের জায়গা বলার অধিকার নেই। আমার জায়গা’ এই শব্দটা যদি উচ্চারন করো তাহলে কিন্তু সবার ক্ষতি হবে, ৫ মিনিটও লাগবে না।”
এসকল বিষয়ে ভুক্তভোগী সেই হকার রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি খেটে খাওয়া মানুষ, দিনরাত ফুটপাতে ফল বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের পেট চালাই। আজকে ৭ বছর ধরে আমি সেই স্থানে ব্যাবসা করছি, শনিবার সকালে এসে দেখি আমার সেই দোকানটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানতে পারলাম ফাড়ির ইনচার্জ সুমিত স্যার আমার জিনিসপত্র সরিয়ে একটি চৌকি এনে জায়গাটি দখল করেছেন। রুবেল আরও জানান, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুমিত স্যার বলেন ডিসি ওয়েস্ট স্যারের নির্দেশে স্যারের এক আত্মীয়ের জন্য আমার দোকানটি দখলে নেওয়া হয়েছে। সুমিত স্যারকে এই বিষয়ে অনুরোধ করলে তিনি সকল হকারের ক্ষতি করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। তবে হকার রুবেল বলেন, আমার মনে হচ্ছে না যে, ডিসি স্যারের মতো এতো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নিজের বিদেশ ফেরত আত্মীয়ের জন্য ফুটপাতের সামান্য হকারকে ক্ষতি করার কথা চিন্তা করবেন।
সত্যতা জানতে সিএমপি’র পশ্চিম বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফুটপাতের হকারের দোকান দখলে আমার নির্দেশনার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে। বিষয়টি অধিকতর খতিয়ে দেখছি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য কর্তৃক কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ থাকলে, অভিযোগকারী পুলিশ কমিশনার মহোদয় বরাবর ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে আবেদন জানালে, কমিশনার মহোদয় বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীর বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
উক্ত অনিয়মের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে অলংকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমিত বড়ুয়া অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, যে লোকটিকে দোকান ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে সে খুবই গরীব মানুষ। ডিসি স্যারের বিষয়টি আসলে সঠিক না, এটা ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছ, সরাসরি দেখা করলে আপনাকে পরিস্কারভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারবো।
ফুটপাতে পুলিশ ফাঁড়ির প্রভাব সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে জানা যায়,পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকা মোড় থেকে অলংকার মোড় হয়ে এ.কে. খান মোড় পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা প্রায় ২ শতাধিক হকার নিয়ন্ত্রণ করে একটি হকার’স সংগঠন। ১৭ জন সদস্য বিশিষ্ট সেই হকার সংগঠনের সভাপতি হানিফ, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহানের নেতৃত্বে সংগঠনের নামে আদায় করা হয় দোকান প্রতি নির্দিষ্ট চাঁদা। সেই চাঁদা থেকে নির্দিষ্ট অংক গুনে দিতে হয় সেই এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমিত বড়ুয়াকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হকার ব্যবসায়ী জানান, দোকান বসালে সংগঠনকে প্রতিদিন একটা খরচ দিতে হয়, যাদের ব্যবসা ভালো তারা পুলিশ খরচ সহ ২০০ থেকে ২৬০ টাকা এবং যাদের ব্যবসা একটু কম তারা পুলিশ খরচ সহ ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা প্রদান করে। টাকাটা পরিশোধ করলে আর কোনো সমস্যা হয় না। কোনো সমস্যা হলেও হানিফ ভাইকে জানালে সমাধান করে দেয়। মাঝে মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান দিলে দোকানের ক্ষতি হয়।
হকারে নতুন দোকান বসানো বাবদ খরচের ব্যাপারে ছদ্মবেশে হকার সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “রাস্তায় দোকান বসালে খরচ তো থাকবেই। কতো টাকা খরচ লাগে তা দোকান বসানোর পর নিজের চোখেই দেখবেন।”
অন্য হকারকে পেশীর জোড় দেখিয়ে অপসারন করে ডিসি’র নাম ভাঙ্গিয়ে সেই জায়গা দখল ও ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজীর সাথে ফাঁড়ির ইনচার্জের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে ২৮ মিনিটের একটি গোপন ভিডিওতে যা গণ্যমাধ্যমের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।