তিন অংশীদারের ইজারাকৃত বাজার দখলে নিতে চাই একজন!
নগরীর চসিক এর আওতাধীন বিবিরহাট কাঁচাবাজারটি ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। কাঁচাবাজারটি ইজারা পেতে পূর্বপরিচিত স্থানীয় তিন ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেন। তিন অংশীদারের মধ্যে মো. নুরুল বশর বিপলু দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করলেও দরপত্রটি কেনা হয় আরেক অংশীদার আকতার হোসেনের ভাই সাইফুল ইসলামের নামে।
সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বাজার পরিচালনার ইজারা পেয়ে বিগত চার মাস যাবত তিন অংশীদার লভ্যাংশ ভাগ করে নিলেও সম্প্রতি নানান অপ কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বাজারের একক দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আকতার হোসেন। জানা যায়, দরপত্রের ফরমটি কিনতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২৬০০ টাকা জমা দেন মো. নুরুল বশর। দরপত্র জমাদানের নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ হারে তিন অংশীদার নুরুল বশর, মোকতার হোসেন ও আকতার হোসেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে তাদের প্রত্যেকের নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জমা দিয়েছেন করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ বরাবরে।
তবে আকতার হোসেনের দাবি বাজারটির ইজারাদার তিনিই। তার সাথে লিখিতভাবে কারও সাথে বাজার ইজারার অংশীদারত্বের চুক্তি হয়নি এবং ইজারার সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি নিজেই।
এ বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সিএমপির উত্তর জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বরাবর। গত ৩০ আগস্ট অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চসিক মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। অভিযোগে দরপত্রের তিন অংশীদারের একজন সাইফুল ইসলামের ভাই আকতার হোসেনকে বিবাদী করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর বিবিরহাট বাজার দরপত্রের আহ্বান করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওইদিন চসিকের রাজস্ব শাখা থেকে দরপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন মো. নুরুল বশর। তিনি তার অ্যাকাউন্ট থেকে দুই হাজার ৬শ’ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে দরপত্রের ফরম কেনেন। যার প্রমাণ হিসেবে রয়েছে পূবালী ব্যাংক বহদ্দারহাট শাখার অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৮১৯১২ ও পে-অর্ডার নম্বর ০৬৩২১১৩।
পরবর্তীতে দরপত্রটি চসিক থেকে সর্বোচ্চ দরদাতা তালিকায় প্রথম হলে সেখানে ওইদিন দরপত্রের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ হারে থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে চসিকের রাজস্ব শাখা বরাবরে জমা করেন তিন অংশীদার।নপরবর্তীতে দরপত্রটি মোট মূল্যের ১৪ লাখ টাকার মধ্যে বাকি টাকা জমা করতে বলা হলে গত ৪ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজারের সামনে আকতার হোসেনকে বুঝিয়ে দেন মো. নুরুল বশর এবং মোকতার হোসেন। পরবর্তীতে ১৪ এপ্রিল নোটিশ দিয়ে বিবিরহাট বাজারটি বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
পরদিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিবিরহাট বাজার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে টানা চার মাস ধরে বাজারের লাভের অংশ তিন অংশীদার সমানভাগে ভাগ করে নেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ২০-২৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে বাজার পরিচালনা করতে বাধা প্রদান করে বিবাদী আকতার হোসেন। ওই সময় তিনি নিজেকে বাজারের মালিক দাবি করে হুমকি দেন। পরে জাতীয় নাগরিক সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশও ডেকে আনেন তিনি। পরে পুলিশের এসে দরপত্রের সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বললে ১২ আগস্ট রাতে তিনজনই থানায় যান। সেখানে সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাজার পরিচালনায় তিনজনই বৈধ ঠিকাদার বলে জানায় পুলিশ। একইসাথে বলা হয়, বাজারটি তিন অংশীদার সমানভাবে পরিচালনা করাসহ লাভের অংশ সমানভাগে নিতে। এর ৩ দিন পর বাজারটি তিন অংশীদারের পক্ষ থেকে তিনজন প্রতিনিধি নিয়োগ করে টাকা উত্তোলন করা হয়। টাকা উত্তোলনের পর বিবাদী আকতার হোসেন তার পরিচিত বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে বাজারের সকল টাকা নিয়ে পালানো চেষ্টা করে। তাদের খারাপ উদ্দেশ্যে বুঝতে পেরে তাদের বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে বাজারের সকল দোকানদারের সাহায্য চায় বাকি দুই অংশীদার নুরুল বশর ও মোকতার হোসেন।
পরবর্তীতে থানায় ফোন করে সাহায্য চাইলে থানা থেকে আবারও তিনজনকে বাজারের সমস্ত টাকা সমানভাবে ভাগ করে নিতে বলা হয় এমনটাই উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। আরও উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট আবারও বাজারটি দখল করতে যায় বিবাদী আকতার হোসেন। সেখানে ভূক্তভোগী নুরুল বশরকে বাজারটি পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হুমকি দেয়। এছাড়া, বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাজার থেকে ওঠানো টাকার অংশের ভাগের জন্য বাকি দুই অংশীদার যোগাযোগ করলে ভাগের টাকা দিবেনা বলে জানায় আকতার হোসেন। একইসাথে তিনি বাজারের মালিক বলে দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে বাজারের ইজাদার দাবি করে আকতার হোসেন বলেন, আমি কোনো বাজার দখল করতে চাচ্ছি না। বাজার ইজারার সমস্ত টাকাগুলো আমার। এখানে কারও কোনো একটা পয়সাও নাই। আমাকে চসিক থেকে এক বছরের জন্য বিবিরহাট কাঁচাবাজারের ইজাদার দেয়া হয়েছে।
দরপত্রের ফরম তিনি কিনেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কেউ দরপত্র কিনতে পারে। তবে, দরপত্র যার নামে কিনবে সেই মালিক। আমি নুরুল বশরের কাছ থেকে দরপত্রের টাকা পেমেন্ট করেছি শুধু। তার কাছে আমি আরও অনেক টাকা পাবো। আমার টাকা না হলে আমার ভাইয়ের নামে কেন ফরম কিনবে? তবে প্রশ্ন উঠেছে দরপত্রের মোটমূল্যের ৩০ শতাংশ কেন বাকি দুইজন পরিশোধ করলেন
প্রথম চার মাস লাভের টাকার ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো টাকাই নেননি বলে অভিযোগ অস্বীকার করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই রকম একটি অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। বিষয়টি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী দেখছেন। মেয়র মহোদয় অভিযোগটি তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।