গ্রামের সড়ক নষ্ট করে মাটি ব্যবসা, দুর্ঘটনা কবলিত মাটি খেকোদের ড্রাম ট্রাক,আটক করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক ইউপি সদস্য (মেম্বার)সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি সড়ক নষ্ট করে অবৈধ ভাবে মাটি ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। রাতের আধারে সড়ক ও কালভার্ট ভেঙ্গে, একটি মাটিবাহী ড্রামট্রাক বিলের পানিতে পড়ে যায় । অল্পের জন্য চালক ও তার সহযোগী রক্ষা পেলেও, গতকাল সোমবার সকালে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি আটক করেছে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বড়কাঞ্চানপুর গ্রামে গতকাল সোমবার সকালে ওই দুর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটি আটকের ঘটনা ঘটে। বছর খানেক আগে উপজেলার কাঞ্চনপুর চেয়ারম্যানবাড়ি বাজার-রশিদপুর পাকা সড়কটি সংস্কার করে, উপজেলা এলজিইডি অফিস। এসড়কের পাশ দিয়ে গেছে বড়কাঞ্চনপুর-ফকিরচালা পর্যন্ত ইটের সলিং সড়ক। এ দুটি সড়ক দিয়ে সুন্দর ভাবে চলাচল করে আসছেন বড়কাঞ্চানপুর, মিনারবহ, গোবিন্দপুর, রশিদপুর, ফকিরচালা, নয়নচালা, মৃধাবাড়িসহ বেশি কিছু গ্রামের মানুষ। শুধু বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষই নয়, সড়ক দুটি দিয়ে চলাচল করে, স্থানীয় কাঞ্চনপুর ও গনকচালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রশিদপুর, বড়ইবাড়ি ও গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু চাপাইর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) জোবায়ের পালোয়ান, সেলিমসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী কৃষি ও অকৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বার বার বারণ করলেও ক্ষমতার দাপটে অবৈধ ভাবে মাটি ব্যবসা করে আসছেন ওই মাটি খেঁকোরা। রাঁতের আঁধারে ওভারলোড করা ১০টনের বেশি মাটি ভর্তি করে অবৈধ ড্রামট্রাক চলাচলের কারণে কাঞ্চনপুর চেয়ারম্যানবাড়ি বাজার-রশিদপুর পাঁকা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে দেবে গেছে ও সাইড ভেঙ্গে গেছে। পাশাপাশি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বড়কাঞ্চনপুর-ফকিরচালা ইট সলিং সড়কটিও। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীরা। সর্বশেষ ওই বড়কাঞ্চনপুর এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রানা আহম্মেদের লেবু ও পেয়ারা বাগান নষ্ট করে, ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রামট্রাকে ভরে, সড়ক দুটি দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ওই মাটি খেকোরা। গত রোববার রাঁতভর ভওড়াচালা, গোবিন্দপুর ও বড়কাঞ্চনপুর গ্রামের ওভার লোড করা মাটি ভর্তি ড্রামট্রাক চলাচল করে। রাঁতের কোনো এক সময় তাদের এমন একটি ড্রামট্রাক ওই কাঞ্চানপুর চেয়ারম্যানবাড়ি বাজার-রশিদপুর পাকা সড়ক ও কালভার্ট ভেঙ্গে পাশের বিলের পানিতে পড়ে যায় । অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ওই ট্রাকের চালক ও সহযোগী। খবর পেয়ে আশপাশ গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে, গতকাল সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি আটক করে রাখেন। গ্রামবাসীর উত্তেজনার মুখে পড়ে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি উদ্ধার না করে অন্যত্র চলে যান উদ্ধারকারীরা। পরে কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে খবর দিয়ে কৌশলে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন মাটি খেঁকো ও ট্রাক মালিক। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রামবাসী। তবে গ্রামের রাস্তা দিয়ে বড় যানবাহন যেন না চলাচল করতে পারে, সেজন্য সড়কের প্রবেশ মুখে বারপোস্টের ব্যবস্থা করার দাবী জানান স্থানীয়রা।
চাপাইর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম ও সেক্রেটারী আরিফ হোসেন দুলাল জানান, গত দেড়-দুই মাস ধরে সড়ক গুলো নষ্ট করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোরা। বাধা দিলেও তারা শুনে না, ক্ষমতার দাপটে দেদারছে অবৈধ ভাবে ড্রামট্রাক দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিক, মালেক মিয়া বলেন, সড়ক ও কালভার্ট ভেঙ্গে ট্রাকটি আমার ধানচাষ করা বিলের জমিতে পড়ে। এতে আমার ক্ষেতটাও নষ্ট হয়ে গেছে। সড়ক ও ক্ষেত ঠিক না করে দেওয়া পর্যন্ত আমরা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি নিতে দিবো না। স্থানীয় হাফিজ উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, বাবুল হোসেন, হাফেজ জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেই মাটি খেকোদের বিচার চেয়ে জানান, শুধু মাটি খেঁকোদের ড্রামট্রাকই নয়, বৈধ ও অবৈধ কাঠ ভর্তি ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবী করছি।
রাস্তার ক্ষতির কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জোবায়ের পালোয়ান জানান, ওই রাস্তা মেরামতের মাধ্যমে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে বড় ট্রাক গুলো ওই সড়ক দিয়ে আর চালানো হবে না।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাহাদুজ্জামান আকন্দ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে বুঝানো হয়েছে। ট্রাকটি উঠানোর পর ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সড়ক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সমস্যা নিরসনের জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।