প্রাইমারি স্কুলে ঘুষ বাণিজ্য চরমে! প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলো নাছির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিনের বিরুদ্বে অভিযোগ দায়ের।
জিয়াউল ইসলাম জিয়া
স্টাফ রিপোর্টার
বহু লেখালেখি, বহু প্রতিবেদন, বহু তদন্তের পরেও প্রাথমিক শিক্ষক কিংবা কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে দুর্নীতি কিছুতেই যেন বন্ধ হচ্ছে না।
নিলাম ডাকার মতো স্কুলে দপ্তরি পদের জন্যও ঘুষ নির্ধারিত হয়েছে সর্বনিম্ন দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এটি আবার কোনো গোপন বিষয় নয়, গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে সর্বত্র দালালরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং লাখ লাখ টাকায় চাকরি ফেরি করছে।
তাদের আবার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে জেলা প্রাথমিক অফিস, স্থানীয় সাংসদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার খুবই ‘সৎ’। চাকরি না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকারও করে এবং অতীতে ফেরতও দিয়েছে এমন আশ্বাস দেয়।
কিন্তু এবারেও তেমনি এক প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন এক ভুক্তভোগী। উনার নাম মাহফুজ আলী, পিতার নাম রফিক আহমদ, গ্রাম কাথারিয়া, বাড়ির নাম গোয়াজ চৌধুরী বাড়ি, থানা বাঁশখালি।
প্রতারকের নাম নাছির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন। নাছির উদ্দিনের পেশা দপ্তরি। জামাল উদ্দিনের পেশা কাথারিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী। এরা দুইজনে বাঁশখালীর শ্রেষ্ঠ প্রতারক। এরা প্রথমে মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে এরপরে আত্মার সম্পর্ক হয়। এরপরে চাকুরীর অফার। এই দু’জনের পেশা হচ্ছে মানুষকে চাকুরী দেওয়ার নামে ব্ল্যাকমেইল করা।
প্রবাসী মাহফুজ আলী একজন কর্মব্যস্ত মানুষ। তিনি ছোটবেলা থেকে প্রবাসী জীবন যাপন করেন। তার কষ্টের বিনিময়ে উপার্জিত টাকাগুলো চাকরির আশায় ঐ প্রতারকদের দেওয়ার সময় প্রতারকদের কে বলেছিল, আমার চাকরি হবে কিনা।
তারা কথা দিলো যে, ” সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা দিলে সমস্যা হবে না, আমি চাকরি দিব। আমি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী এবং স্কুল কমিটির দায়িত্বে আছি। আমার কথা সবাই শুনবে। টাকা দাও আমাকে” এই বলে টাকা নিয়েছে এই প্রতারক।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলে, “আমি তো দপ্তরি হিসেবে আছি। তোমার টাকা মাইর যাবে না। জামাল উদ্দিনকে টাকা দাও। এই বলে দুই প্রতারক সম্মিলিতভাবে টাকা হাতিয়ে নিল।
মাহফুজ আলী এখন সরকারি দপ্তরগুলোতে চাকুরীর আশায় কাগজপত্র নিয়ে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত অফিসে অফিসে গিয়ে ঘুরে। অবশেষে চাকরি হলো না তার। টাকাও ফেরত দিল না এই প্রতারক চক্র।
প্রতারণার স্বীকার মাহফুজ আলী বলেন, আমার স্বর্বস্ব উপার্জন দিয়ে দেশে একটি চাকরির আশায় চেষ্টা তদবির করার এক পর্যায়ে প্রতারক নাসির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন এর সাথে আমার আলাপ হয়। তারা আমার চাকরি নিশ্চিত হওয়ার গ্রান্টি দিয়ে আমার টাকা হাতিয়ে নিলো। আমাকে একদম নিঃস্ব করে দিয়েছে। পরবর্তীতে তাদেরকে অনেক অনুরোধ করি। পরে এলাকার গন্যমান্য লোকজন এর সাহায্য নিয়েও তাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে পাইনি। এছাড়াও কিছু দিন আগে টাকা ফেরত দিবে বলেও টাকা আর ফেরত দিলো না।
চাকরি প্রার্থী মাহফুজ আলী দাবি করে বলেন, আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতারক নাছির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন। উল্টো জান মালের হুমকি দিয়ে আমাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগাচ্ছে দিনের পর দিন।
এদিকে প্রতারক নাছির উদ্দীন ও জামাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মুঠোফোনে তাদের সাথে কথা বলা যায় নি।
উপায়ান্তর না পেয়ে মাহফুজ আলী আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গত ২৯/৮/২৩ ইং তারিখে।
অভিযোগটিতে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার সাং কাথারিয়া ইউপি, ৬ নং ওয়ার্ড এর ওয়াল্লা বাড়ির আবু তালেবের ছেলে নাছির উদ্দিন ও একই থানা ও ইউনিয়ন পরিষদের মুন্দার বাড়ি, বাঘমারা, ৩ নং ওয়ার্ড এর মরহুম ফেরু মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিন কে অভিযুক্ত করে ডায়েরি করেন কাথারিয়ার গোয়াছ চৌধুরী বাড়ির রফিক আহমেদ এর ছেলে মাহফুজ আলী।
তিনি উক্ত অভিযোগে উল্লেখ করে জানান, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী সহজ, সরল ও আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। পক্ষান্তরে অভিযোগে উল্লেখিত নাছির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন উভয়ই ঠক, প্রতারক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তারা দেশের আইন আদালতের প্রতি মোটেও শ্রদ্ধাশীল নয়। অভিযুক্ত ১নং ব্যক্তি ৪৯নং মধ্য কাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি এবং ২নং ব্যক্তি কাথারিয়া বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও কাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগে আরও জানা যায়, ওই ব্যক্তিদ্বয় তাদের পদ পদবি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্কুলে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরিমাণে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
ভুক্তভোগী মাহফুজ আলী তার অভিযোগে আরোও জানান, এই প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পরে সেও প্রতারিত হয়েছে। তিনি জানান, আমার নিকট হতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিগত ৬/৬/২৩ইং তারিখ ৩০০৳ নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা গ্রহণ করেন নাছির উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন। আমাকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে ৫লাখ ৩০হাজার টাকা নিয়েও তারা চাকরি দিতে পারে নাই এবং আমার সেই টাকা তারা ফেরতও দিচ্ছে না। আমি বারংবার ফেরত চাইলে তারা আমার সাথে আরও প্রতারণা করে।
এই প্রতারকদ্বয় একইভাবে গ্রামের সহজ আরও লোকজনকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরিমাণে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। উক্ত আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা মোকদ্দমায় জড়ানোর হুমকি ধমকি প্রদান করে ও মারধর করতে উদ্যত হয়।
এহেন হুমকি ধমকিতে আমি ও গ্রামের সহজ সরল জনগণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। নিরুপায় হয়ে প্রতারকদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।
উক্ত অভিযোগ এর অনুলিপি চট্টগ্রাম জেলা বোর্ডের জেলা শিক্ষা অফিসার, বাঁশখালী থানা নির্বাহী অফিসার ও চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর প্রেরণ করা হয়। আরো বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে