সৈয়দপুরে সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা
নীলফামারীর সৈয়দপুরে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সাংবাদিক মো. জাকির হোসেনের উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ও শ্বাসরোধে হত্যা চেষ্টা করে হামলাকারীরা। এতে হাত কেটে যাওয়াসহ গলায় এবং উপর্যুপরি কিলঘুসি মারায় বুকে ও মাথায় গুরুত্বর আঘাত পেয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসময় জাকিরের সহযোগী দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার সৈয়দপুর প্রতিনিধি শাহজাহান আলী মননও আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৮ আগস্ট) রাত ৯ টায় শহরের কাজীপাড়া পানির ট্যাংকি এলাকায় এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় অন্যান্য সংবাদকর্মীরা এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদের উপর চড়াও হয় হামলায় অংশগ্রহণকারীরা। এমনকি ভিডিও করায় মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে নানাভাবে হুমকি অব্যাহত আছে। ফলে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নির্যাতনের শিকার দুই সংবাদকর্মী।
জানা যায়, সোমবার রাত ৮ টার দিকে পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া ঈদগাহ মাঠ মোড় এলাকায় সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করতে যায় ৭ জন সাংবাদিক। কাজ শেষে ফেরার পথে কাজীপাড়া পানির ট্যাংকি এলাকায় পৌছলে রওশন সার্কাসের বাড়ির মোড়ে ধর ধর বলে পিছন থেকে ৫-৭ জন দৌড়ে এসে পথরোধ করে অতর্কিত সংঘবদ্ধ হামলা চালায়।
সৈয়দপুর শহরের নয়াটোলা এলাকার মৃত আজিজার রহমান (ঝিলা) এর ছেলে মাসুদুর রহমান লেলিনের নেতৃত্বে সৈয়দপুর টিভি নামে একটি ফেসবুক পেজের এডমিন ও পাটোয়ারীপাড়া এলাকার হেলাল মুন্সির ছেলে নাজমুল হুদা, কয়ানিজপাড়ার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে এনজিও কর্মী তাজু, ধলাগাছ এলাকার পারভেজ, কাজীপাড়ার বখাটে যুবক জামান ও অজ্ঞাত আরেক যুবক এই হামলা চালিয়েছে। এরা একটা অপরাধী চক্র, যারা মাদক ও দেহ ব্যবসা পরিচালনা, লোকজনকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ নানা বেআইনী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ মিলেছে।
জাকির হোসেন বলেন, লেলিনের নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে। সে ধর ধর বলে লিড দেয় আর নাজমুল হুদা লাথি মেরে মোটর সাইকেল উল্টে ফেলে। আমরা মাটিতে পড়ে থাকাবস্থায়ই নাজমুল আমার গলা টিপে ধরে। আমার শ্বাষরোধ অবস্থায় নাজমুল, জামান ও অজ্ঞাত আরেক যুবক উপর্যুপরি কিল ঘুসি মারতে থাকে। আমার সাথে থাকা সাংবাদিক শাহজাহান মাটি থেকে উঠে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে জামান ও অজ্ঞাত যুবকটি তার উপড়ও চড়াও হয়ে কিল ঘুসি মারতে থাকে।
তখনও নাজমুল এক হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে এলোপাথাড়ি মারছিল। এক সময় সে অন্য হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দিতে উদ্ধত হলে আমি বাধা দিলে আমার ডানহাতের কব্জির কাছে লেগে কেটে যায়। ওই মূহুর্তে লেলিন ও তাজু এসে আমাকে আঘাত করে। তাজু পিছন থেকে লাথি মারায় আমি পাশের ওয়ালে ছিটকে ধাক্কা খাই এবং মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাই। এই সুযোগে তাজু আমার প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে নিয়েছে। মানিব্যাগে নগদ ১০ হাজার টাকা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, সাংবাদিকতার কার্ডসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছিল।
এমতাবস্থায় সাংবাদিক টুটুল এগিয়ে এসে নাজমুলকে আটকানোর চেষ্টা করলেও সে আমার গলা ছাড়েনি। পরে দৈনিক আমার সংবাদের সাংবাদিক ওয়ালিউর রহমান রতন, এশিয়ান টিভির মাইনুল হক, যুগের আলোর রাজু আহমেদ, ভোরের পাতার জয়নাল আবেদনীন হিরো এসে টেনে হিচড়ে তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে তাদেরকেও আঘাত করে হামলাকারীরা। এশিয়ান টিভির নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি মাইনুল হকের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে জামান। এটা মূলতঃ আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত হামলা। এব্যাপারে আমি আদালতে মামলা করবো।
সাংবাদিক শাহজাহান আলী মনন বলেন, আমাদের উপর ফিল্মি স্টাইলে হামলা করা হয়েছে। একযোগে হামলে পড়ে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর করেছে। জাকিরকে যেভাবে অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং শ্বাষরোধ করা হয়েছে তাতে আমরা অন্য সাংবাদিকরা না থাকলে মেরে ফেলা হতো। হামলাকারীদের আচরণ চরম উদ্ধত ছিল এবং প্রচণ্ড আক্রোশ আর পশুত্ব মনোভাবাপন্ন হয়ে তারা আঘাত করছিল। জাকিরকে রক্ষার চেষ্টা করায় লেলিন, জামান ও আরেক যুবক আমাকেও আঘাত করেছে।
সাংবাদিক টুটুল বলেন, কাজীপাড়া এলাকাবাসী নাজমুল নামের ছেলেটিকে একজন নষ্টা মহিলাসহ আটক করে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে সেখানে আমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী গেলে এলাকাবাসী জানায়, ওই নারীকে দিয়ে নাজমুল দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় মারপিট না করে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে লোকজনকে বুঝিয়ে তাৎক্ষণিক ঝামেলা মিটানো হয়। এতে লেলিন, তাজু, পারভেজ, আকাশ, মানিক সেখান থেকে নাজমুল কে নিয়ে চলে যায়।