
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহে বিষাক্ত মদ পানে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একসঙ্গে এতজনের মৃত্যুর ঘটনা এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় প্রায় ৯-১০ জন লেবার একত্রিত হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ মদ পান করেন। কিছুক্ষণ পরই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে একে একে ৭ জন মারা যান। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হানুরবাড়াদি গ্রামের মৃত কাতব আলীর ছেলে অলিউদ্দিন (৫০) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিচয়: মদ পানে নিহতরা হলেন নফরকান্দি পূর্বপাড়া গ্রামের খেদের আলী,নফরকান্দি গ্রামের হায়াত আলী, খেজুরা হাসপাতালপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম, পিরোজখালী স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক লাল্টু ওরফে রিপু, শংকরচন্দ্র মাঝেরপাড়ার লেবার শহীদ, ডিঙ্গেদহ টাওয়ারপাড়ার মিল শ্রমিক সমির, ডিঙ্গেদহ পাওয়ার হাউজপাড়ার লেবার সর্দার লাল্টু।মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক তবে নিহতদের মধ্যে নফরকান্দি গ্রামের খেদের আলীর মৃত্যুকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। নিহতের পরিবার দাবি করেছে, তিনি কোনোভাবেই মদ পান করেননি, বরং স্ট্রোক করে মারা গেছেন। খেদের আলীর মেয়ে জানান, “আমার বাবা দীর্ঘদিন পেটের ব্যথাজনিত রোগে ভুগছিলেন। হাসপাতালের চিকিৎসার মধ্যেই তিনি চিন্তায় পড়ে স্ট্রোক করে মারা যান। তিনি কখনো মদ পান করেননি। একই দাবি করেন স্থানীয় এক প্রতিবেশীও, যিনি বলেন, “খেদের আলী অসুস্থ মানুষ ছিলেন, তাকে আমরা কখনো নেশা করতে দেখিনি।” লাল্টুর মৃত্যুর বর্ণনা অন্যদিকে ডিঙ্গেদহ পাওয়ার হাউজপাড়ার মৃত লাল্টুর পরিবারের সদস্যরা জানান, লাল্টু শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন এবং পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার স্ত্রী মোছাঃ রেহেনা খাতুন বলেন, “স্বামী বাড়ি ফিরে বারবার মাথায় পানি ঢালতে বলেন, পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানতে পারি, তিনি নাকি মদ পান করেছিলেন। অথচ আগে কখনো এমন করেননি।”মৃত লাল্টুর মা মোছাঃ হালে বেগমও জানান, “আমার ছেলে ভালো ছিল, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা বুঝতেই পারিনি, এমন কিছু ঘটবে।” আইনগত ব্যবস্থা ও তদন্ত অগ্রগতি ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী মদ বিক্রেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে খেজুরা গ্রামের বাকী শেখের ছেলে জুমাত আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটকের পর তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাকেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পরিদর্শক মোঃ হোসেন আলী বলেন,“প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, মৃত্যুগুলো অ্যালকোহলজাত পদার্থ সেবনের কারণেই হয়েছে। হাসপাতালের ময়না তদন্ত রিপোর্টেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে। এদিকে নিহত লাল্টুর ভাই রাকিবুল বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ আসামীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। এলাকায় শোক ও আতঙ্ক একসঙ্গে ৭ জনের মৃত্যুতে পুরো ডিঙ্গেদহ ও আশপাশের গ্রামগুলোতে নেমে এসেছে গভীর শোক। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত জড়িতদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এভাবে একসঙ্গে এতজনের মৃত্যুর নজির নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।










