নওগাঁয় ইফতারে সবচেয়ে প্রিয় প্রসিদ্ধ পাতলা টক দই, এর মাঠা-ঘোল বিক্রি ধূম
Spread the love

উজ্জ্বল কুমার সরকার : ইফতারে নওগাঁবাসীর সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ টক দইয়ের মাঠা বা ঘোল। স্থানীয়দের কাছে ‘পাতলা দই’ নামে পরিচিত। রমজান এলেই চাহিদা তুঙ্গে থাকে এ পাতলা দইয়ের। সারা দিন রোজা রেখে দিন শেষে এক গ্লাস পাতলা দই তৃষ্ণার্ত রোজাদারদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। বাসিন্দারা জানান, নওগাঁবাসীর কাছে পাতলা দই শুধু একটি পানীয় নয়, এটি তাঁদের সংস্কৃতির অংশ। যত ধরনের খাবারই থাকুক না কেন, ইফতারে এক গ্লাস ঠান্ডা পাতলা দই না হলে যেন তৃপ্তি আসে না।প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানের শুরু থেকেই নওগাঁ শহরের ফুটপাত, অভিজাত রেস্তোরাঁ এবং প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে পাতলা দই বিক্রির ধুম পড়েছে। দুপুরের পর থেকেই মাটির হাঁড়িতে সাজিয়ে এই পানীয় বিক্রি শুরু হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় শহরের বিভিন্ন মোড়ে, অলিগলিতে পাতলা দই বিক্রির ব্যস্ততা। মুক্তির মোড়, ব্রিজের মোড়, তাজের মোড়, সরিষাহাটির মোড়, গোস্তহাটির মোড়—সবখানেই দইয়ের হাঁড়ি সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই ক্রেতাদের সারি পড়ে যায়।ক্রেতারা বলছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ইফতারে পাতলা দই খেয়ে আসছেন। দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর এক গ্লাস ঠান্ডা দই শুধু প্রশান্তিই দেয় না, বরং শরীরের জন্যও উপকারী। শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফারুক হোসেন বলেন, ‘রমজানে আমাদের বাসায় ইফতারে পাতলা দই থাকতেই হবে। সারা দিন রোজা রাখার পর এটি পান করলে একধরনের প্রশান্তি আসে।’শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইফতারে পাতলা দই খেয়ে আসছি। অন্যান্য শরবতের চেয়ে এটি বেশি উপকারী মনে হয়। এবার দাম একটু বেশি হলেও স্বাদ আগের মতো।’ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ধরনের মাটির হাঁড়িতে এই দই বিক্রি হয়। বড় হাঁড়ির দাম ২০০-২২০ টাকা এবং ছোট হাঁড়ির দাম ১৬০-১৮০ টাকা। ব্রিজের মোড়ে দই বিক্রেতা আবদুল করিম বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানে আমাদের দইয়ের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে এবার দুধের দাম বেশি হওয়ায় দাম বাড়াতে হয়েছে।’ শুধু শহর নয়, নওগাঁর বিভিন্ন গ্রামেও রমজানজুড়ে প্রতিদিন বিকেলে ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক শোনা যায়—‘পাতলা দই লাগবে? ঠান্ডা দই, সুস্বাদু দই’। ফতেপুর এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের শৈশব থেকেই ইফতার মানেই পাতলা দই। এক যুগ আগেও দাম অনেক কম ছিল। এখন অনেক বেড়েছে।’ নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী এই দইয়ের উৎপত্তি নিয়ে স্থানীয় প্রবীণ কবি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘একসময় যেটা মাঠা নামে পরিচিত ছিল, এখন তা পাতলা দই নামে পরিচিত। ষাট-সত্তরের দশকে লিটন ব্রিজে মাঠার হাঁড়ি নিয়ে বসতেন ঘোষরা। গরমের দিনে মানুষ মাঠা খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ত। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এলেও, নওগাঁবাসীর পাতলা দইয়ের প্রতি ভালোবাসা এখনো অটুট; বিশেষ করে রোজায় চাহিদা বেড়ে যায়।’ চিকিৎসকদের মতে, পাতলা দই পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার বলেন, পাতলা দইয়ে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

সর্বশেষ খবর

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930