পরিবারকে স্বাবলম্বী করার আশায় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মেহেরপুরের তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক যুবকের কোনো চাকরি জোটেনি। ৩-৪ মাস আগে মালয়েশিয়ায় গেলেও আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না পাওয়ায় কর্মহীনভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
কাজ না পাওয়া যুবকরা একটি ঘরে খেয়ে না খেয়ে বন্দি জীবন পার করছেন। সম্প্রতি এমন ভিডিও তারা স্বজনদের কাছে এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় দালালরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, ওইসব যুবকের কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে, কেউ বা জায়গা-জমি বিক্রি করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দালালের হাতে প্রত্যেকে তুলে দিয়েছিলেন ৫-৭ লাখ টাকা। এখন তাই এনজিওর লোকরা বাড়িতে এসে ভুক্তভোগীর পরিবারদের চাপ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
মালয়েশিয়ায় থাকা ভুক্তভোগীরা জানান, গাংনীর সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান মাজেদ মাস্টার, কাজীপুরের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরজ ও তার ভাই আওয়াল ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠান।
এলাকার দানবীর বলে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের ঢাকার নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাঠানো হয়। চার মাস তাদের কাজ জোটেনি। মালয়েশিয়ায় তাদের দালাল চক্র প্রথমদিকে খাবার ও পানি দিলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়ে টাকার দাবি করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকিও।
একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তারা বাড়ি এসে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে আজকে পরিবারসহ তারা সর্বস্বান্ত। দালাল চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী।
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, ওরা অনেক টাকা খরচ করে গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা তার পরিবারের পাশে সব সময় আছি।
দালাল চক্র সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ও বাড়িঘর তালাবদ্ধ রয়েছে।
সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলামের পাঠানো ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুরবস্থার কথা বলে তাদের ফিরিয়ে আনা অথবা কাজ পাইয়ে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাকুতি-মিনতি করছেন তারা।
জহিরুলের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, গরু-ছাগল বিক্রি ও জমি বন্ধক রেখে ছেলেকে বিদেশে পাঠাই। এখন কী বিক্রি করে ছেলেকে ফিরিয়ে আনব।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক জানান, আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা জানান, বিষয়টি প্রথম জানলাম। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা থানায় অথবা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।