বাঁশখালীতে হামুন এর তাণ্ডব: জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।
বাঁশখালীতে হামুনের তান্ডব, লণ্ডভণ্ড পুরো উপজেলা, নিহত ২, বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন পুরো এলাকা অন্ধকারে।
ঘর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো বাঁশখালী উপজেলা। ভেঙে পড়েছে দুই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ও কয়েক হাজার গাছগাছালি। ঘরবাড়ি ভেঙেছে শত শত। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া তান্ডবে উপজেলার সরল ও কাথারিয়া ইউনিয়নে দুইজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- সরল ইউনিয়নের উত্তর সরল এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খলস্যাপাড়ার কবির আহমেদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৭০) ও কাথারিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফজর আহমদের ছেলে মমতাজ মিয়া (৫৫)।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারী প্রকৌশলী লিপটন ওম জানান, সরল ইউনিয়নের বাসিন্দা মমতাজ বেগম রাতে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। পরে তাকে বাইরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- আতঙ্কে তার মৃত্যু হয়েছে। কাথরিয়ায় গাছ চাপা পড়ে মমতাজ মিয়া নামে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় বাঁশখালীতে। মাত্র ২০ মিনিটের ভয়াবহ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো উপজেলা। উপজেলার জলদী, বাণীগ্রাম, চেঁচুরিয়া, গুণাগরি, সাহেবের হাট, বৈলছড়ি, পাইরাং, নাপোড়াবাজার এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে দুই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে বুধবার রাতে (১০ টা) এই রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত বাঁশখালীর কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। পুরো বাঁশখালী অন্ধকারে। পরিনত হয়েছে ভূতুড়ে এলাকায়। কবে নাগাদ বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ দেয়া হতে পারে তাও জানেনা খোদ কর্মকর্তারা। প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ আছড়ে পড়ায় দুপুর পযর্ন্ত বাঁশখালীর সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগও বন্ধ ছিল। এছাড়া হামুনের তান্ডবে ব্যাপক বাড়িঘর বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল-ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি দোকান ও খাবার হোটেলে জেনারেটর চালিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় দোকান চালু করা হলে সেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দোকানে মোবাইল চার্জ দিতে মানুষের ভীড় লক্ষ করা যায়। বাঁশখালীর সংবাদকর্মীরা উপজেলা পরিষদ গেইটের গ্রীণচিলি হোটেল মোবাইল চার্জ দিয়ে কোন রকমে সংবাদ প্রেরণের সুযোগ দেন হোটেল মালিক শহিদুল ইসলাম। বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড, ৩ নং ওয়ার্ড সৈয়দ বাহারুল্লাহপাড়া, সিন্নিপুকুর পাড়, দিঘীরপাড়, লস্করপাড়া, ছুম্মাপাড়া ও মনসুরিয়া এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। উপকূলের গন্ডামারা, বড়ঘোনা, সরল, ছনুয়া, শেখেরখীল, চাম্বল, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ এলাকায় ঘরবাড়ি ভেঙে ও গাছগাছালি উপড়ে ভেঙে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম রিষু কুমার ঘোষ জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনে জলদী সাব স্টেশন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাব স্টেশনের সামনে দুটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ৩৩ হাজার ভোল্টের তার ছিঁড়ে গেছে। ২শতাধিক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। লাইনের ওপর গাছ পড়ে তারও ছিড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ বাঁশখালীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছেনা।
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার নুরুল বশর জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে পড়া গাছ সরানোর কাজ শুরু করেছি। সড়কের পাশে থাকা গাছপালা সরিয়ে দেওয়ার পর দুপুরের দিকে বাঁশখালীর সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ও যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পেরেছি। রাত পর্যন্ত প্রেমবাজার-নাপোড়া পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার জানান, বাঁশখালীতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ২৮৩টি ঘর পুরোপুরি ভেঙে গেছে ও ৪৬৬১টি ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। বুধবার ১ হাজার ৫০০ জনকে খাবার দেয়া হবে। পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালুর জন্য চেষ্টা করছে বলে আমাকে জানিয়েছে।
ছবি ক্যাপশন (১) হামুনের তান্ডবে বাঁশখালীতে গাছ পড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার দৃশ্য