বিসিক উদ্যোক্তা মেলার আড়ালে বাণিজ্যিক বিশৃঙ্খলা
Spread the love

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা মেলা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বাণিজ্য মেলায় রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিসিকের স্থানীয় উপব্যবস্থাপকের কারসাজিতে মেলা পরিচালনার সুযোগ নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তথ্যানুসন্ধানের পর স্থানীয় প্রশাসন মেলায় বসানো সব বাণিজ্যিক রাইড বন্ধের নির্দেশ দিলেও অন্যান্য কার্যক্রম চলমান ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, ২৭ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্যোক্তাদের হাতে তৈরি হস্ত ও কুটির শিল্প সামগ্রী প্রদর্শন ও বিক্রয়ের কথা থাকলেও মেলায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি খুবই কম। অধিকাংশ স্টল ভরা সাধারণ বাণিজ্যিক পণ্যদ্রব্যে। অনেক স্টলে সাইনবোর্ড নিচে নামিয়ে রাখা হয়েছে অজ্ঞাত কারণে। এছাড়া দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্টলের সামনে ভেজা পোশাক শুকানোয় মেলায় আসা নারী উদ্যোক্তা ও দর্শনার্থীরা পড়ছেন অস্বস্তিতে। মেলার জন্য সরকারি বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০টি স্টল। মোট ৯৮টি স্টলের বাকি ৭৮টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নিবন্ধনহীন ব্যবসায়ীদের হাতে। সাভার, রাজশাহী, ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতিদিন ১–২ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকারি হিসেবে প্রতিটি অনিবন্ধিত স্টলের ভাড়া জমা দেওয়ার কথা ৩ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এসব ৭৮টি স্টল একাধিক দালালের মাধ্যমে ‘শ’ নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয় ৮–১০ হাজার টাকায়। যারা একাধিক স্টল পেয়েছেন, তাদের দিতে হয়েছে ২০–২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব হিসাব মিলিয়ে বিসিক উপব্যবস্থাপক আগাম হিসেবে পকেটস্থ করেন প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। রংপুর ও লালমনিরহাটের তিস্তা এলাকায় ‘শ’ নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে এসব অর্থ গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে। এ কাজে তার বিশেষ সহকারী সুমন মিয়া সহযোগিতা করেছেন। মেলার ভেতরের স্টল থেকে প্রতিদিন ১–২ হাজার টাকা তুলছেন বিসিকের আরেকজন কর্মী ও একটি মধ্যস্থতাকারী চক্র। এছাড়া নৌকা, ট্রেন, বক্সিং পয়েন্টসহ কয়েকটি রাইড থেকেও উপব্যবস্থাপকের পকেটে ঢুকছে মোটা অংকের টাকা। নাইটগার্ড থাকা সত্ত্বেও এসব স্টলে চুরির অভিযোগ করেছেন অনেক দোকানদার। তাদের দাবি, জামদানী শাড়ি, থ্রি–পিস, আংটিসহ নানা মালামাল চুরি গেছে। মেলায় ঘুরতে আসা স্থানীয় দম্পতি আশিকুর ও রত্না বলেন, “হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রদর্শনী দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে যে ধরনের পণ্যের স্টল আছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে না—এটি উদ্যোক্তা মেলা, না বাণিজ্য মেলা।” স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বার্ষিক পরীক্ষার সময় স্কুলসংলগ্ন স্থানে বাণিজ্যিক মেলা তাদের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। সুজন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি খন্দকার খায়রুল আনাম বলেন, “মেলা নিয়ে যথাযথ প্রচারণা হয়নি। অনেক স্থানীয় উদ্যোক্তাই জানেন না মেলা হচ্ছে। পরীক্ষার সময়ে স্কুলের পাশে এমন মেলা অযৌক্তিক। এছাড়া দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে সুযোগ দেওয়ার অভিযোগও গুরুতর। বিষয়টি প্রশাসনের তদন্ত করা উচিত।” অভিযোগ সম্পর্কে উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, “বাইরের উদ্যোক্তাদের আসায় কোনো বাধা নেই। স্থানীয়রা আগ্রহী না হওয়ায় তাদের ডাকা হয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিইনি। আমি ঢাকায় মিটিংয়ে আছি, ফিরে কথা বলব।” জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, “মেলায় কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি কাম্য নয়। আপনারা যা যা জানালেন তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সর্বশেষ খবর

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031